অরুপ অধিকারী : – মেলার সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। এসব মেলাতে হরেক রকমের জিনিসের বেচাকেনা হয়।কিন্তু, মশলা মেলার কথা ক’জনই বা জানেন?অথচ উত্তর শহরতলীর গোবরডাঙ্গার নিজস্ব এই মশলা মেলা এ বছর ২০৩ বছরে পড়ল।প্রতি বছরের মতো এ বছরও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন একেবারে সকাল থেকেই হরেক মশলার পসরা সাজিয়ে মেলা জমিয়ে তুলেছেন মশলা ব্যাবসায়ীরা।মাত্র কয়েক ঘন্টা ধরে চলা এই মশলা মেলায় কোটি টাকার বেচাকেনাও হয়।

বাংলার নতুন বছর ঘিরে গ্রামে হাজারো মেলার ভিড়ে আলাদা করে পরিচিতি করে নিয়েছে গোবরডাঙ্গার মশলা মেলা।গোড়ায় অবশ্য মেলার নাম ছিল গোষ্ঠবিহারী মেলা। মেলার সঙ্গে মশলা কথাটা ছিল না।লোকের মুখে মুখেই এই মেলার নামকরন হয়ে গিয়েছে মশলা মেলা।মশলার চাষি থেকে ব্যাপারিরা মনে করেন, পয়লা বৈশাখের দিনে বিক্রিবাট্টা ভালো হলে, বছরের বাকি সময়েও ভালো যাবে ব্যবসা।তাই মশলা নিয়ে মেলায় হাজির হন তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মশলা মেলায় হাজির হন মশলা ব্যবসায়ীরা।মশলাই বিক্রি হয় পাইকারি দামে।তবে খুচরো বিক্রিও বেশ হয়।

গোবরডাঙ্গার মশলা মেলার একটা ইতিহাস আছে।সময়টা ইংরাজির ১৮২২। বাংলার ১২২৯ সালের পয়লা বৈশাখে শুরু হয়েছিল এই মেলা।ঠিক ২০৩ বছর আগে।গোবরডাঙ্গার জমিদারবাড়ি লাগোয়া যমুনার তীর বরাবর প্রথম বসেছিল এই মশলা মেলা।শুরু করেছিলেন গোবরডাঙ্গার জমিদার খেলারাম মুখোপাধ্যায়।মুলত,দুটো ভাবনা থেকেই তিনি মেলার শুরু করেছিলেন বলেই জানা গেছে।তিনি দেখেছিলেন,পয়লা বৈশাখের আগেই চাষিরা ডাল,হলুদ, জিরে,শুকনো লংকা,পোস্ত,কালোজিরে,পেঁয়াজ, গোলমরিচ,আদা,রসুন তুলে ফেলেন।বাংলা বছরের প্রথম দিনেই যদি চাষিরা এই মশলা ফসল বিক্রি করে দিতে পারেন,তাহলে তাঁরা দুটো পয়সার মুখ দেখবেন।

আর দ্বিতীয়টি হল, হাতে নগদ অর্থ এলে জমিদারের খাজনাও পরিশোধ করে দিতে পারবেন প্রজারা।জমিদার খেলারামের এই ভাবনার মেলা কয়েক বছরের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।প্রতি বছর পয়লা বৈশাখের ভোর চারটে থেকে শুরু হয় এই মশলা মেলা।চলে দুপুর একটা পর্যন্ত। পাশাপাশি গোবরডাঙ্গা গোষ্ট বিহারী মেলা চলে ১০দিন ব্যাপী।তবে এই মেলায় অন্যান্য জিনিসের মেলা চলে ১০ দিন ধরে।সেখানে আর মশলা বিক্রি হয় না।১৯৮৩ সালের আগে মশলা মেলায় অসংগঠিত ভাবেই বিক্রেতারা আসতেন।তারপর থেকে মশলা মেলার দায়িত্ব নেয় গোবরডাঙ্গা ঐতিহাসিক স্মৃতিরক্ষা কমিটি।